বিশ্ব কারুশিল্প নগরের মর্যাদা পাওয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ। নির্দিষ্ট একটি জায়গাকে ‘বিশ্ব কারুশিল্প নগর’ বা ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট সিটির মর্যাদা প্রদানের রেওয়াজ বেশি দিন আগের নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে চীনের উদ্যোগ। ২০১২ সালে তারা ফুশিন শহরকে আলাদা মর্যাদা দেওয়ার দাবি তোলে ডব্লিউসিসির কাছে। ৮ হাজার বছরের পুরোনো শহরটি আকিক পাথরের জন্য বিখ্যাত। প্রক্রিয়া স্থির করে শহরটিকে ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট সিটির মর্যাদা দিতে এক বছর সময় লেগে যায়। সে বছরই ফুশিন পায় ‘চায়না অ্যাগেট সিটি’ হিসেবে ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট সিটির মর্যাদা।
এরপর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদও সোনারগাঁর জন্য একই মর্যাদা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল, জানালেন কারুশিল্প পরিষদের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফটস কাউন্সিলের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রুবি গজনবী।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন (জিআই) পণ্যের মর্যাদা পায় জামদানি। ওই বছরই জামদানিকে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়। এর পরের দুই বছর লেগেছে বিভিন্ন পূর্বশর্ত পূরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। সর্বশেষ গত বছর বিশ্ব কারুশিল্প পরিষদ বিচারকমণ্ডলী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর বাংলাদেশে জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের উদ্যোগে জামদানি উৎসবের আয়োজন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে বেঙ্গল শিল্পালয়ে হয় বড় প্রদর্শনী। জুরিরা যাতে ওই সময় সোনারগাঁ পরিদর্শন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থাও সহযোগিতা করে।
জামদানি উৎসব শুরু হয় গত ৬ সেপ্টেম্বর। তার আগে ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন বিশ্ব কারুশিল্প পরিষদের তিন বিচারক ঘাধা হিজাউই-কাদুমী, উষা কৃষ্ণান ও সুরাপি রোজানাভংসে। বিচারকেরা সরেজমিনে সোনারগাঁ যান এবং জামদানি বয়নের নানা পর্ব পর্যবেক্ষণ করেন।
উৎসবের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘর থেকে পঞ্চাশ থেকে আড়াই শ বছরের পুরোনো ৫০০ জামদানির ছবি সংগ্রহ করা হয়। এসব ছবি থেকে বাছাই করে আড়ং, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, অরণ্য ও কুমুদিনীর সহায়তায় ৮০টি শাড়ি বোনা হয়। অনিন্দ্যসুন্দর শাড়িগুলোর একটি অংশ করেন সোনারগাঁর বয়নশিল্পীরা। টানা ও ভরনায় ২০০ কাউন্ট খাদি সুতায় বোনেন শাড়িগুলো।
বিচারকেরা ঢাকায় অবস্থানকালেই সোনারগাঁর বিশ্ব কারুশিল্প শহরের মর্যাদাপ্রাপ্তির ব্যাপারে ইতিবাচক আভাস দেন। এরপর চলতি বছরের ৮ অক্টোবর মেলে বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই স্বীকৃতি।