অনেক কিছুই যা থাকে চোখের আড়ালে – আজ তেমনি একজনের কথা বলবো –
জনসমাগমে ব্রেস্ট ফিডিং বেবি কর্নার কেন নয় শীর্ষক একটি খবর চোখে পরল এবং পুরো খবরটা পত্রিকায় পড়লাম। খবরটা পড়ে অনেক খারাপ লাগল এবং ঐ সকল মা ও শিশুরা যখন এমন পরিস্থিতিতে পরেন সেই সময়ের কথা চিন্তা করে খুবই ব্যাথিত ও লজ্জিত হলাম।
খবরটি পড়েই আমার মনে পরে গেল আমার প্রথম অফিসের কথা যেখানে আমার বস ছিলেন নাহিদা আলাম ম্যাম। এখানে শুধু ব্রেস্ট ফিডিং বেবি কর্নারই নয় বরং ডে কেয়ার সেন্টার ও ছিল আজ থেকে ১৫ বছরের ও বেশি সময় আগে থেকে। শুধু কি তাই আমার জানা মতে তিনিই দেশে প্রথম চিকিৎসার জন্য ভিডিও কনফারেন্স এর ব্যবস্থাও করেন।
এই ভিডিও কনফারেন্স নিয়ে একটা বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা এবং সমন্বায়ক স্যার ডা. জাফরুল্লাহ বলেন- “যে কাজটি আমি এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুস করতে পারি নাই তা আজ নাহিদা বাস্তবে করে দেখিয়েছে।”
হেলথ হেল্প ম্যাগাজিন উদ্বোধনের সময় আরও একজন ডাক্তার বলেছেন- “আমি মাদার তেরেসা কে সামনাসামনি দেখিনি বা নেলসন ম্যান্ডেলাকেও দেখি নি কিন্তু আমি একজন মাদার নাহিদা আলমকে দেখেছি।”
এছাড়াও তিনি একক চেষ্টায় বাংলাদেশী হৃদরোগীদের নিজে কাউন্সিলিং করতেন এবং আর্থিক অস্বচ্ছল রোগীদের ডাঃ দেবী শেঠীর সহায়তায় বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন।
নাহিদা আলম ম্যাম ডাঃ দেবী শেঠীর চীফ কো-অর্ডিনেটর ও কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ অফ নারায়ানা হেল্থ ছিলেন। এবং আমার দেখা মতে বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম স্বাস্থ্যসেবায় ইংরেজি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন যা সর্বজন সমাদৃত ছিল।
কিন্তু কোন দিনও আমি শুনলাম না যে নাহিদা আলম ম্যাম এরকম বলেছেন যে- আমি রোগীদের চিকিৎসার জন্য এতকিছু করেছি।
আমাদের অফিসের বস নাহিদা আলাম ম্যাম যাকে আমরা বস নয় বরং আমাদের অভিভাবক বা মা হিসাবেই জানি। কতটা মননচিন্তাশীল, উদার মানসিকতা ও দূরদর্শী হলে একজন মানুষের পক্ষে এটা করা সম্ভব হয় । তিনি যে সুযোগ সুবিধা ১৫ বছরের ও বেশি সময় আগে থেকে তার অফিসে দিয়ে আসছেন সেই সুবিধা নেবার জন্য ১৫ বছরেরও পর এসে একজন মা ও শিশুকে আদালতের শরনাপন্ন হতে হয়েছে।
এই অফিসেই আমার চাকুরীজীবন শুরু এবং ম্যাম এর হাত ধরেই সবকিছু শেখা। আমি বর্তমানে অন্য অফিসে আছি, আমার এই অবস্থানেও বর্তমান বসের পাশাপাশি, ম্যামের রয়েছে বিশেষ অবদান। এই অফিস আমার কাছে শুধু অফিস নয় আমার পরিবার, যেখানে নাহিদা আলম ম্যাম আমার অভিভাবক, আমার মা।
যাই হোক, এই লেখার সময় আমি আমার আগের কলিগদের সাথে কথা বলি এবং তাদের মধ্যে একজনের বক্তব্য নিচে তুলে ধরলাম –
লিফা আক্তার (লাকী)
নাহিদা হেলথ কেয়ার এর শুরু থেকে নাহিদা আলম ম্যাম এর সাথে কাজ করে আসছি।
যেহেতু একদম নতুন হিসাবে এখানে কাজ শুরু করেছিলাম এবং কোনো পূর্ব চাকুরীরির অভিজ্ঞতাও ছিল না তাই অন্য অফিসের কার্যক্রম বা সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানি না, কিন্তু এতটুকু বলতে পারি যে-
# বিয়ের পর জয়পুরহাট থেকে স্বামীর সাথে চলে আসি ঢাকায় তারপর নাহিদা আলম ম্যামের অফিসে জয়েন করি এবং এখান থেকেই আমার এইচ এস সি পরবর্তী পড়ালেখাও সম্পূর্ণ করি ম্যামের সহযোগিতায়।
# প্রথম যখন সন্তান সম্ভবা হই তখনও ম্যাম আমাকে অফিসে রাখতেন।এমনকি আমার জন্য আলাদা একটা রুমে বিছানা ও বসার ব্যবস্থাও করেন এবং একজন সন্তান সম্ভবা মায়ের সমস্ত পরিচর্যার ব্যবস্থা-নিয়মিত হেলথ চেকাআপ, খাওায়া-দাওয়ার রুটিন, বিভিন্ন পরামর্শ ও মানসিক সহযোগিতা সবই করতেন।
# এমনকি যেদিন আমি মা হবো সেদিনও আমি জানতাম না আজই সেইদিন।
নাহিদা আলম ম্যাম ই এটা বুঝতে পারেন এবং আমাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেন।পরে ডাক্তারের কাছে জানতে পারি যে আর ঘণ্টা খানেক দেরি হলেই আমি আর আমার সন্তান দুজনকেই হয়তো বাঁচানো যেত না।কারন বাচ্চার অবস্থান নাকি ঠিক ছিল না।
# আমার দ্বিতিয় সন্তানের জন্মের সময়ও আমি অফিসেই ছিলাম।আমার দুইটা সন্তানই এই অফিসেই বড় হয়েছে, এখানেই তাদের লালন পালনের ব্যবস্থাও করেছিলেন ম্যাম।এমনকি তাদের পড়ালেখার হাতেখড়িও হয় নাহিদা আলম ম্যামের হাত ধরেই।
# এছাড়াও আমার দেখা আরও যারা আমার সহকর্মী ছিলেন, বিশেষ করে নারি তারাও এসব সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন।এখন হয়তো অনেকেই এখানে নেই, কিন্তু তারা যেখানেই থাকুক না কেন সবাই এখনো নাহিদা আলম ম্যামের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন, ফোন দিয়ে খোঁজ নেন,কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।এখনো কোনো সমস্যায় পরলে তারা নাহিদা আলম ম্যামকে জানান এবং ম্যাম ও ঠিক আগের মতো সমাধান করে দেন পরামর্শ দিয়ে বা অন্য যেকোনোভাবে।