আজ ১২ ই আগস্ট ২০১৭ ইং দুপুরবেলা নাহিদা হেল্থ কেয়ার সার্ভিসেস এর কাজ গুলো দেখছিলাম কম্পিউটারে। হঠাৎ একটা ছবি দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কি লিখব তাই মনে মনে ভাবছিলাম,আর ভাবছিলাম! আমি তো লেখিকা নই । তবুও তার জন্য কিছু লিখার সাধ জাগল।
আমি নিষ্ঠার সাথে তখন শুধুমাত্র ডাঃ দেবী শেঠীরই কাজ করতাম। হঠাৎ করে একজন একটি ভিজিটিং কার্ড আমাকে দিয়ে বললেন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি জরুরী ভিত্তিতে আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন। তারপর ভিজিটিং কার্ডটি দেখে বুঝতে পারলাম তিনি একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক আলমগীর কুমকুম। কিন্তু আমার জানা ছিল না যে উনি একজন রাজনীতিবিদও। যাই হোক দেখা হল, তারপর আলমগীর কুমকুম ভাইয়ের অসুস্থতা সম্পর্কে জানাও হল, তিনি একদমই সব আশা ছেড়ে দিয়ে হতাশ হয়ে পরেছিলেন। হয়তো বা তার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে মানসিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাই ছিল প্রধান কারণ । ঠিক ঐরকম অবস্থায় আলমগীর কুমকুম ভাইকে আমি নিশ্চিত আত্মবিশ্বাসের সাথে আশ্বাস দিয়ে ডাঃ দেবী শেঠীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ শরীরে ফিরে এসে কুমকুম ভাই আমাকে ও ডাঃ দেবী শেঠীকে নিয়ে খুব সুন্দর একটা কলাম লিখলেন। যা কিনা দৈনিক পত্রীকায় প্রকাশিত হয়েছিল – যার নাম ছিল “ডাঃ দেবী শেঠী হৃদরোগীদের জন্য ভালবাসার মানুষ”।
সেখান থেকে কিছু অংশ দেয়া হলো যতটুকু কুমকুম ভাই আমার জন্য লিখেছিলেন —
“বাংলাদেশের মেডিকেল সেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ৬/৮, লালমাটিয়া, ব্লক-এফ (নিচতলা) ফিজিক্যাল কলেজের বিপরীতে সমাজসেবক নাহিদা আলমের অফিস(সেই সময়কার অফিস)। আমার হৃদরোগের কারণে স্নেহের বাঁধনে বাধা পড়ে গেছে বাংলাদেশের মানবসেবায় নিয়োজিত এক সমাজসেবক তরুণী নাহিদা আলম। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের প্রতি ডাঃ দেবী শেঠীর সহানুভূতি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে সহযোগিতা করার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করেন আট বছর আগে (২০০৫ এর সময়ের কথা)। বর্তমানে তিনি সর্বস্তরের মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানে কাজ করছেন। রোগীদের চিকিৎসা চলাকালীন সময় সার্বক্ষনিক রোগীর অবস্থা জেনে নেয়া, দেশে ফেরার পর যাবতীয় রিপোর্ট প্রেরণসহ প্রয়োজনীয় যোগাযোগের মাধ্যমে ডাঃ দেবী শেঠীর ওপেনিয়ন পেতে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা প্রদান করেন নাহিদা আলম। এটা আশ্চার্যজনক মনে হলেও সত্য- সকল সহায়তা প্রদান করেন বিনা টাকা-পয়সায়।”(এটাও ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত)
যাহাই হোক তার অনুপ্রেরণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে পা দিয়ে কতই না,সাভারের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক, ৩২ নং বঙ্গবন্ধুর সৌধে পুষ্পস্তবক, শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিতে যাওয়া, এ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ সেমিনার, আলোচনা সভার অনুষ্ঠানে কুমকুম ভাই যেখানে যেতেন, সেখানেই আমাকে নিয়ে যেতেন। এক কথায় বলতে গেলে কুমকুম ভাই চাইতেন আমি যেন নিজেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
যেহেতু কুমকুম ভাই একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাই সিনেমাজগত থেকে শেষের দিকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেছিলেন যার ফলশ্রুতিতে তার শারীরিক অবস্থা খুব ধীরে ধীরে অবনতির দিকে চলে গিয়েছিল।
এর মাঝেই আমার সাথে কুমকুম ভাই এর একটা খুব ভাল ভাই বোনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কুমকুম ভাই আমাকে রাজনীতিতে আসার কথাই শুধু বলেন নাই , আমাকে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য করে নিয়েছিলেন। ভাইয়া বলতেন তোমাদের মত মানুষেরই রাজনীতিতে আসা খুব প্রয়োজন।
বলতেন “তুমি যেভাবে মেডিকেল সেক্টরে ধনী, গরিব সকল মানুষেকে সমভাবে সাহায্য করছ কোন আর্থিক বিনিময় ছাড়াই, তুমি যদি রাজনীতিতে আস তাহলে আমরা উপকৃত হবো বলে আশা করি।”
অসুস্থতা এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতার সাথে যুদ্ধ করেই কুমকুম ভাই তার শেষ দিন পার করেছেন। এইটা আমাদের ব্যার্থতা এমন একজন গৌরবান্বিত,দেশ বরেণ্য, বিখ্যাত মানুষকে এভাবে চলে যেতে হল।
আমি কেনইবা রাজনীতিতে ছিলাম আর কুমকুম ভাই কেনইবা অসময়ে চলে গেলন, এটা শুধুমাত্র আল্লাহ জানেন । কুমকুম ভাই ও মারা গেলেন আর আমিও রাজনীতি থেকে সরে আসলাম।
কুমকুম ভাই চলে যাওয়াতে যেন মনে হলো আমার জীবনের একটি সুন্দর অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো।
***আলমগীর কুমকুম ভাই চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে, শুধু রেখে গেছেন না বলা আরও অনেক স্মৃতি আর ভাল কাজ। আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। সৃষ্টিকর্তা তাকে জান্নাতবাসী করুন।***
নাহিদা আলম রিনি