অ্যাজমা ও সিওপিডি ফুসফুসের দুটি পরিচিত রোগ। সময়মতো চিকিৎসা নিলে সুস্থ জীবন যাপন করা যায়।
অ্যাজমা বা হাঁপানি:
যেসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, অ্যাজমা বা হাঁপানি তার মধ্যে অন্যতম। অ্যাজমা ক্ষুদ্র শ্বাসনালির সংকোচনের কারণে হয়। যাদের অ্যাজমা আছে, তাদের শ্বাসনালি স্বাভাবিকদের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল। যেসব উপাদান অ্যাজমাকে ত্বরান্বিত করে, সেগুলোকে অ্যাজমা ট্রিগার বলা হয়।
এই রোগের সঙ্গে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থাকতে পারে। সংবেদনশীল অ্যাজমা ট্রিগারের ফলে হাঁচি-কাশি হতে পারে।
অ্যাজমা ট্রিগার:
যে উপাদানের সংস্পর্শে অ্যাজমা শুরু হয় বা বেড়ে যায়, সেগুলো রোগীভেদে একেক রকম।
♦ ধুলায় বসবাসকারী কীট ‘ধুলা মাইট’
♦ পুরনো আসবাবপত্র বা ঘরে জমে থাকা ধুলা, ধোঁয়া, স্প্রে, অ্যারোসল, সিগারেটের ধোঁয়া
♦ কম্বল, কার্পেট, টেডি বেয়ার
♦ পশুর পশম (যেমন—বিড়াল), বিভিন্ন পশু-পাখির ফার্মের ধুলা
♦ ফুলের পরাগ রেণু
♦ বিভিন্ন খাবার, যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সংবেদনশীলতা/অ্যালার্জি আছে (পুঁইশাক, কুমড়ো, চিংড়ি, ইলিশ প্রভৃতি)
♦ ঠাণ্ডা আবহাওয়া
♦ শ্বাসনালিতে ভাইরাস সংক্রমণ
♦ বিভিন্ন ওষুধ (বিটা ব্লকার, এনএসএআইডিএস, এসপিরিন)
♦ এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম
♦ স্ট্রেস প্রভৃতি
অ্যাজমার কারণ:
সঠিক কারণ এখনো খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কারণে হতে পারে—
♦ বংশগত বা নির্দিষ্ট অ্যালার্জি বা অ্যাজমার ট্রিগারের প্রতি সংবেদনশীলতা
♦ পরিবেশগত বা ধুলা, ধোঁয়া
♦ বাচ্চাদের নিউমোনিয়া বা ব্রংকিওলাইটিস
উপসর্গ:
♦ বুকের ভেতর বাঁশির মতো শব্দ হওয়া
♦ শ্বাসকষ্ট
♦ বুকে চাপ অনুভব করা
♦ দীর্ঘমেয়াদি শুষ্ক কাশি
করণীয়:
♦ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন, ইনহেলার ব্যবহার করা, পরামর্শ মেনে চলা
♦ নিজের বসবাসের রুম, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা
♦ বিছানার তোশক, বালিশ, কম্বল কড়া রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করা
♦ বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, পর্দা পরিষ্কার রাখা
♦ নিজের অ্যাজমা ট্রিগার এড়িয়ে চলা
♦ মাস্ক ব্যবহার করা প্রভৃতি
অ্যাজমা হলে যা জানা উচিত:
♦ অ্যাজমা ছোঁয়াচে বা সংক্রমণ রোগ নয়। তাই শুধু অ্যাজমা হলে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই।
♦ ইনহেলার সর্বাপেক্ষা কার্যকর ও নিরাপদ চিকিৎসা। ইনহেলার সরাসরি শ্বাসনালিতে কাজ করে।
♦ গর্ভাবস্থায়ও চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাজমার ওষুধ ও ইনহেলার ব্যবহার করা যায়।
♦ সারা জীবন নয়, যত দিন অ্যাজমা থাকবে, তত দিন ইনহেলার এবং ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। সুস্থ হওয়ার পরও অ্যাজমা ট্রিগারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
♦ স্টেরয়েড চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট ডোজ নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত খেতে হবে।
সিওপিডি:
ক্রনিক ব্রংকাইটিস ও এমফাইসিমার সমন্বয়ে হয় সিওপিডি (Chronic Obstructive Pulmonary Disease)। ক্রনিক ব্রংকাইটিস হচ্ছে ধূমপানের ফলে ঘন ঘন শ্বাসনালির প্রদাহ। আর এমফাইসিমা হলো ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুথলির দেয়াল নষ্ট হয়ে বড় বায়ুথলি তৈরি হয়। এই বড় বায়ুথলিগুলোর সংকোচন ক্ষমতা ক্ষুদ্র বায়ুথলির তুলনায় অনেক কম। ফলে পর্যাপ্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ বাতাস বের হতে পারে না। অক্সিজেনের আদান-প্রদান ব্যাহত হয়। এই সমস্যার কারণে ফুসফুসের স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। এটাকেই এমফাইসিমা বলে। তবে হাঁপানি বা অ্যাজমা এবং সিওপিডি এক নয়। সিওপিডিতে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় এবং এই রোগ ক্রমে গুরুতর হতে থাকে। এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে অসুখের তীব্রতা কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
কারণ:
মূলত ধূমপান করার কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। যাঁরা ধূমপান করেন, ৪০ বছরের বেশি বয়স, তাঁদের এ রোগের ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত বেশি। এ ছাড়া যাঁরা দীর্ঘদিন বিভিন্ন কল-কারখানায় ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশে কাজ করেন, খড়ির চুলায় রান্না করেন, তাঁদেরও ঝুঁকি রয়েছে। জিনগত কারণে এবং বায়ুদূষণের জন্যও হতে পারে এ রোগ।
জটিলতা:
সিওপিডির জটিলতাগুলো হলো ফুসফুসীয় উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ (রাইট হার্ট ফেইলিওর), ফুসফুসের ক্যান্সার, নিউমোথোরাক্স, এমফাইসিমেটাস বুলা ইত্যাদি।
লক্ষণ ও উপসর্গ:
কাশি, তীব্র শ্বাসকষ্ট, শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হওয়া, কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা নির্গত হওয়া। সামান্য হাঁটাচলাতেই হাঁপিয়ে যাওয়া। মাঝেমধ্যে জ্বর, ওজন কমে যাওয়া প্রভৃতি। শীতকালে এই উপসর্গগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
করণীয়:
♦ ইনহেলার নিতে হবে
♦ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে
♦ প্রয়োজনে চেস্ট ফিজিওথেরাপি নিতে হবে
♦ ধূমপান ত্যাগ করতে হবে
♦ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে
♦ নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।
অ্যাজমা ও সিওপিডি হলে করণীয় পরীক্ষা দীর্ঘমেয়াদি কাশি হলে যেসব পরীক্ষা করা জরুরি:
♦ বুকের এক্স-রে
♦ সিবিসি
♦ কফ পরীক্ষা
♦ স্পাইরোমেট্রি
♦ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
ইনহেলার কথা:
♦ ইনহেলার সর্বাপেক্ষা কার্যকর ও নিরাপদ চিকিৎসা
♦ অ্যাজমার প্রাথমিক চিকিৎসা ইনহেলার
♦ ইনহেলার ব্যবহার করলে সারা জীবন ব্যবহার করতে হবে, বিষয়টি সত্য নয়। অ্যাজমা রোগীর কোনো শ্বাসকষ্ট না থাকলে, শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ থাকলে ইনহেলার ব্যবহার করার দরকার নেই।
♦ ইনহেলারে কেউ অভ্যস্ত হয়ে যায় না
♦ ভ্রমণে গেলে অবশ্যই ইনহেলার ব্যাগে রাখতে ভুলবেন না। অ্যাজমা ট্রিগারের কারণে ভ্রমণকালে তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। তখন ইনহেলারই আপনার জীবন রক্ষা করবে।
সংগৃহীত ।